May 29, 2024, 8:21 pm

সংবাদ শিরোনাম
রংপুর সিটির তিন মাথায় নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু, ইউপি চেয়ারম্যান ও ভবন মালিকের যোগসাজসে গোপনে লাশ দাফন আদমদীঘির ধান শরিয়তপুরে উদ্ধার; গ্রেপ্তার-২ অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলনকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ০৬ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০ মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকা হতে গাঁজা ও বিদেশী পিস্তলসহ কুখ্যাত অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ী সাগর’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০ মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ধাক্কায় চালকের মৃত্যু ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর প্রভাবে উপকুলের সতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত কুড়িগ্রামে বেবী তরমুজের চাষে তিন মাসে আয় দেড় লাখ টাকা মাঝরাত্রে প্রবাসীর ঘরে ঢুকে স্ত্রীও মা কে ছুরি মেরে পালালো দুর্বৃত্তরা বগুড়ার শিবগঞ্জে জাতীয় অনলাইন প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন: এমদাদুল আহবায়ক রবি সদস্য সচিব গাইবান্ধা প্রেসক্লাব’র কমিটি গঠিত

ঢামেক হাসপাতালে দালালরা অফিস করে সকাল-সন্ধ্যা ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকের রমরমা ব্যবসা

আনসারদের সহযোগিতায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরঘুর   কৌশলে ভাগিয়ে নেয়া হচ্ছে রোগী   অতিরিক্ত তিন-চারগুণ টাকা পকেট থেকে কাটা যাচ্ছে

মোঃ ইকবাল হাসান সরকারঃ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের এক্সরে, সিটিস্ক্যান, ইসিজিসহ গুরুত্বপূর্ণ মেশিন নষ্ট হওয়ায় কৌশলে রোগীদের বিভিন্ন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে ভাগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে দালালদের সহযোগিতা করছে হাসপাতালের একশ্রেণীর অসাধু কর্মচারী ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা।

হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নির্বিঘ্নে ঘুরে ঘুরে দালালরা রোগীদের টেস্টের স্যাম্পল সংগ্রহ করে। এভাবে তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অর্ধশতাধিক ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকের দেড় শতাধিক প্রতিনিধি (দালাল) এজন্য ঢামেক হাসপাতালে নিয়মিত সকাল-সন্ধ্যা অফিস করছে।

একশ্রেণীর অসাধু চিকিৎসকের সঙ্গে আঁতাত করে তারা রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছে।

ঢামেক হাসপাতালে এক্সরে, সিটিস্ক্যান, ইসিজি, এমআরআই, আল্ট্রাসনোগ্রাম, রেডিওথেরাপিসহ ১০টি মেশিন দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট থাকায় ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষ এ সুযোগ নিচ্ছে। আর রোগী দেয়ার নামে কতিপয় চিকিৎসক-কর্মচারী হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের কমিশন।

অতিরিক্ত তিন-চারগুণ টাকা রোগীর পকেট থেকে কাটা যাচ্ছে। আর কমিশনের টাকায় ফুলেফেঁপে উঠছে চক্রের সদস্যরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকের প্রতিনিধিরা ঢামেক হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়ায়। রোগীরা কোন ক্লিনিকে যাবে, তা একশ্রেণীর অসাধু চিকিৎসক ঠিক করে দেয়। ক্লিনিক ও প্রতিনিধির নাম এবং ফোন নম্বর তারা লিখে দেয়।

কিছু টেস্ট ঢামেক হাসপাতালে করা সম্ভব হলেও চিকিৎসক, ওয়ার্ডবয় ও নার্সরা এখানে করাতে রোগীদের আত্মীয়স্বজনদের নিরুৎসাহিত করে। অভিযোগ, দালালদের হাসপাতালে ঢুকতে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে।

জানা গেছ, ঢামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। এছাড়া জরুরি বিভাগে এক থেকে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। এ হাসপাতালে প্রতিদিন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার ভর্তি রোগী চিকিৎসা নেন।

তবে এ বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন এক হাজার চিকিৎসক ও ৫০০ ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং ২২শ’ নার্স। রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

এজন্য ঢামেক হাসপাতালে বিভিন্ন মেশিন সরকারিভাবে স্থাপন করা রয়েছে। কিন্তু এ হাসপাতালের গুরুত্বপুর্ণ যন্ত্রপাতি বছরের পর বছর নষ্ট হয়ে আছে। হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগেই প্রয়োজনীয় বেশ কিছু যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে আছে।

ঢামেক হাসপাতালের ৬টি এক্সরে মেশিনের মধ্যে দুটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। দুটি সিটিস্ক্যান মেশিনের একটি নষ্ট অনেক দিন ধরে। এছাড়া দুটি এমআরআই মেশিনের মধ্যে একটি নষ্ট। অথচ প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা এবং রাত ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পরীক্ষা করানো হয়। অপরটি দিয়ে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পরীক্ষার কাজ চলে। অভিযোগ, এটি দিয়েও সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না।

সূত্র জানায়, ঢামেক হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ রোগীকে সিটিস্ক্যান করানোর পরামর্শ দেয়া হয়। ঢামেকে এ সুবিধা পাচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ রোগী। অন্যদিকে যাদের তাৎক্ষণিক সিটিস্ক্যান করানোর প্রয়োজন হয়, সেসব রোগীকে হাসপাতাল থেকে প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এছাড়া এমআরআই করার জন্য প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন রোগীকে পরামর্শ দেয়া হয়। এ হাসপাতাল থেকে ৮/১০ জন রোগী এমআরআই সুবিধা পাচ্ছেন। বাকি ৫০ থেকে ৫২ জনকে বাইরের ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে পাঠানো হয়। হৃদরোগে আক্রান্ত ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে যান। এসব রোগীর রোগ নির্ণয়ের প্রথম ধাপ হল ইসিজি ও ইকো কার্ডিওগ্রাফি করা।

হাসপাতাল-২ এর তৃতীয় তলায় তিনটি ইকো কার্ডিওগ্রাফি মেশিন রয়েছে। তবে সবগুলো মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রয়োজনীয় টেস্ট করানোর জন্য বাইরে পাঠানো হচ্ছে। এতে একদিকে রোগীদের দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকা খরচ হচ্ছে, অন্যদিকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

কিডনি সমস্যার চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরে পাঠানো হচ্ছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগের ইউরোলজি বিভাগের কিডনি থেকে পাথর অপসারণের মেশিনটি তিন বছর ধরে বিকল হয়ে আছে। এছাড়া ঢামেক বহির্বিভাগের ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য চারটি রেডিওথেরাপি মেশিনের মধ্যে তিনটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট।

যেসব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে রোগী পাঠানো হয় : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশে বেশকিছু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এছাড়া পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ধানমণ্ডি ও শান্তিনগর শাখা), ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাব সায়েন্স, ল্যাব জোন, পিওর সায়েন্টেফিক, কেয়ার ল্যাব, পিপলস, মেডিনোভা, শাপলা, প্রাইম, এসআরএল. আনোয়ার খান মডার্ন, এইচআই, ভারতীয় লালপ্যাথ ল্যাব, প্রাইম ডায়াগনস্টিক, দ্য প্যাথলজি, ল্যাব সাইন্স, শাপলা, পদ্মা, মডার্ন হেলথ কেয়ার ও চাঁনখারপুল জেনারেল হাসপাতাল, এআইখান ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ বেশ কিছু ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে রোগীকে টেস্টের জন্য পাঠানো হয়।

ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকের প্রতিনিধি (দালাল) আশিক, সোহেল, জালাল, ডালিম, হাসান, ফারুক, কালাম, জাকির, বিপ্লব, সাইদুর, শিশির, ময়নুল, মানিক, গোপাল, দ্বীপরাজ, জিহাদসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তি ঢামেক হাসপাতালে নিয়মিত সকাল-সন্ধ্যা অফিসের মতোই ডিউটি করে। সেখানে নিজেদের মতো করেই তারা ঘুরে বেড়ায়।

আবার দালালদের অপতৎপরতায় বিরক্ত হয়ে অনেক রোগী বাড়ি চলে যান। সম্প্রতি উত্তর ধানমণ্ডি এলাকার সাইদুল ইসলাম তার মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সায়মা পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন।

সাইদুল প্রাইভেট ডিটেকটিভকে জানান, চিকিৎসক সুমাইয়ার আল্ট্রাসনোগ্রামসহ বেশ কয়েকটি টেস্ট করতে বলেন। এমন সময় তার সামনে হাজির হন পপুলার ডায়াগনস্টিকের একজন প্রতিনিধি।

ধানমণ্ডির পপুলারে তাকে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এ সময় আরও কয়েকজন তার মেয়েকে অন্য ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সাইদুল তাদের তৎপরতায় বিরক্ত হয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে বাসায় চলে যান। পরে পান্থপথ এলাকায় একজন চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি মেয়েকে সুস্থ করেন।

জানা গেছে, ঢামেক হাসপাতালে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ধানমণ্ডি ও শান্তিনগর শাখায় ২৫ জনের বেশি প্রতিনিধি নিয়মিত থাকে। এছাড়া আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ১৬ জন প্রতিনিধি, ল্যাব সায়েন্সের ২২ জন রয়েছে। অন্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের প্রতিনিধিও হাসপাতালে থাকে। তারা একেকজন একেক ওয়ার্ডে কাজ করে।

প্রাইভেট ক্লিনিকে চার-পাঁচগুণ বেশি টাকা গুনতে হয় : যেখানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিবিসি টেস্ট করাতে লাগে ১৫০ টাকা সেখানে একই টেস্ট পপুলার ডায়াগনস্টিকে লাগে ৭৮০ টাকা, মেডিনোভায় ৪৫০ টাকা ও ল্যাব সায়েন্সে ৫০০ টাকা। এসজিপিটি করাতে ঢামেক হাসপাতালে লাগে ৭০ টাকা, পপুলারে ৪০০, মেডিনোভায় ৩০০, ল্যাব সায়েন্সে ৩৫০ টাকা লাগে। এসজিওটি করাতে ঢামেক হাসপাতালে লাগে ৭০ টাকা, পপুলারে ৪০০, মেডিনোভায় ৩০০ ও ল্যাব সায়েন্সে ৩৫০ টাকা। টিসিডিসি করাতে ঢামেক হাসপাতালে লাগে ১৫০ টাকা। একই টেস্ট পপুলারে ৭৮০ টাকা, মেডিনোভায় ৪৮০ টাকা ও ল্যাব সায়েন্সে ৫০০ টাকা। সিটিস্ক্যান করাতে ঢামেক হাসপাতালে দুই হাজার টাকা, পপুলার মেডিনোভা ও ল্যাব সায়েন্সে লাগে চার হাজার টাকা। এমআরআই করাতে ঢামেক হাসপাতালে লাগে ৯ হাজার টাকা। পপুলার, মেডিনোভা ও ল্যাব সায়েন্সে লাগে ২১ হাজার টাকা। একই অবস্থা অন্য সব ডায়াগনস্টিকেও।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : এসব ব্যাপারে বক্তব্য নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার একেএম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি উপপরিচালক ডা. মো. শাহ আলমকেও।

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন প্রাইভেট ডিটেকটিভকে  বলেন, ইকো মেশিন নষ্ট ছিল। মুগদা জেনারেল হাসপাতাল থেকে একটি মেশিন শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেয়া হয়েছে।

অন্য নষ্ট মেশিনগুলোর গ্যাপ পূরণ করতে নতুন করে টেন্ডার করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরেই হয়তো নতুন মেশিনগুলো স্থাপন করা যাবে। তবে সিটিস্ক্যান ও এমআরআই মেশিন মেরামত করতে অনেক সময় লাগবে। দালালদের তৎপরতার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. কাজী জাহাঙ্গীর বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বহিরাগত এসব লোক যাতে হাসপাতালে ঢুকতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেয়া হবে।

 

 

 

 

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২৩এপ্রিল২০১৮/ইকবাল

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর